ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি এ ভারতবর্ষ। ভারতের অফুরন্ত সম্পদ এবং অতুল ঐশ্বর্য যুগে যুগে বিদেশিদের আকর্ষণ করেছে। তাই বহু প্রাচীনকাল হতেই এ উপমহাদেশে বিভিন্ন জাতির আগমন ঘটেছে সম্পদ আহরণের নেশায়। ভারতের অতুল ঐশ্বর্য এবং ধনসম্পদের খবর পেয়ে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে অন্যান্য জাতির ন্যায় ইউরোপীয়গণও এদেশে আগমন করেন।
বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এদেশে তাদের আগমন ঘটলেও তারা এদেশের রাজনৈতিক প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপরতা আরম্ভ করে এমনকি পরস্পর প্রতিযোগিতা শুরু করে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর হতে ইংরেজরা ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় দু’শো বছর শাসনকার্য পরিচালনা করে। ভারতের হিন্দু-মুসলমান প্রজাগণ তাদের শাসন হতে মুক্তিলাভের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। ফলে ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
১. ফরায়েজি আন্দোলন ব্যর্থ হয় কেন?
উত্তর: নেতৃত্বের অভাবে ফরায়েজি আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজি শরীয়তউল্লাহর মৃত্যুর পর তার পুত্র দুদু মিয়া এই আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। দুদু মিয়ার মৃত্যুর পর যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ফরায়েজি আন্দোলনের গতি স্তিমিত হয়ে পড়ে। এছাড়া সংকীর্ণ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং দুদু মিয়ার উত্তরাধিকারীদের অদূরদর্শিতা ও আন্দোলনের লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে ফরায়েজি আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
২. দ্বৈত শাসন কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভের পর লর্ড ক্লাইভ বাংলা প্রদেশকে শাসন করার যে নীতি গ্রহণ করে তা-ই ‘দ্বৈত শাসন’ নামে পরিচিত।
দ্বৈত শাসন হলো দুজনের শাসন। এ ব্যবস্থায় বাংলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ফৌজদারি বিচার, শান্তিরক্ষা, দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব ছিল নবাবের ওপর। অন্যদিকে বাংলার রাজস্ব আদায়, দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচার, জমি- জমার বিবাদ সম্পর্কিত বিচার কোম্পানির ওপর ন্যস্ত হয়েছিল। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা, আর নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব। লর্ড ক্লাইভের বাংলা শাসনের এ অভিনব নীতিই ‘দ্বৈত শাসন’ নামে পরিচিত।
৩. ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’- সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর: ১৯৪০ সালের ২২-২৩শে মার্চ লাহোরের মুসলিম লীগের ২৭তম অধিবেশনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতিতত্ত্ব ঘোষণা করেন।
দ্বিজাতিতত্ত্বের মূলকথা হলো হিন্দু-মুসলিম আলাদা জাতি। তাদের ধর্মীয় ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক রীতি, প্রথা এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পূর্ণ আলাদ। সুতরাং সাম্প্রদায়িক জটিলতা নিরসনের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন অপরিহার্য বলে তিনি মনে করেন।
৪. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কেন ঘটেছিল?
উত্তর: লর্ড ক্লাইভের প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনের ফলে এবং প্রাকৃতিক কারণে বাংলায় মহাদুর্ভিক্ষ বা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ঘটেছিল।
দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলে কোম্পানি রাজস্ব সংগ্রহে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ফলে বাংলার জনগণের অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। তাছাড়া ১৭৬৮ সালে বৃষ্টির অভাবে ফসল ভালো না হওয়ার পরও কোম্পানি করের হার না কমিয়ে বরং বৃদ্ধি করতে থাকে। যার চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে ১৭৭০ সালে দেখা দেয় মহাদুর্ভিক্ষ। বাংলা ১১৭৬ সনে এ দুর্ভিক্ষ হয় বলে একে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বলা হয়।
৫. খেলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: খেলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম জাহানের খলিফার মর্যাদা এবং তুরস্কের অখন্ডতা রক্ষা করা। ভারতীয় মুসলমানগণ মুসলিশ বিশ্বের ঐক্যের প্রতীক তুরস্কের প্রতি আনুগত্য ও সম্মান প্রদর্শন করতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের সুলতান ব্রিটিশবিরোধী শক্তি জার্মানির পক্ষে যোগদান করলে ভারতীয় মুসলমানগণ ব্রিটিশদের এ শর্তে সমর্থন দেয় যে ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধ শেষে তুরস্কের খলিফার কোনো ক্ষতি করবেন না। কিন্তু যুদ্ধে পরাজয়ের পর ব্রিটিশরা তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে ভারতীয় মুসলমানরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে খলিফার মর্যাদা ও তুরস্কের অখণ্ডতা রক্ষার লক্ষ্যে খেলাফত আন্দোলন গড়ে তোলে।
৬. ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছিল কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছিল।
১৯৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লব সুপরিকল্পিতভাবে এবং সুযোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত হয়নি। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব, দুর্বল সংগঠন, বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মধ্যে একতার অভাব, সংহতি ও সর্বভারতীয় আদর্শের অভাব প্রভৃতি কারণে এ বিপ্লব সাফল্য লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের তুলনায় ইংরেজরা ছিল অধিক দক্ষ, রণকুশলী, নিষ্ঠাবান ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত, যা বিপ্লবীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে।
৭. ঔপনিবেশিক যুগে বাংলার মুসলিম সমাজে শিক্ষা সংস্কার প্রয়োজন হয়েছিল কেন? ব্যাখ্যাসহ লেখ।
উত্তর: ঔপনিবেশিক যুগে বাংলার মুসলিম সমাজে বিদ্যমান নানা কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস তাদেরকে উন্নয়নের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে, তাই তখন শিক্ষা সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়।
পলাশির যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা হারিয়ে বাঙালি জাতি এক অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিপতিত হয়। মুসলমানরা ইংরেজি শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে দেখা দেয় পশ্চাৎপদতা, অনগ্রসরতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার প্রভৃতি। তাই এ সময়ে বাংলার জনগণকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সমাজে শিক্ষা সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
৮. লর্ড কার্জন ‘বিভাজন নীতি’ গ্রহণ করেন কেন?
উত্তর: ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দুর্বল করার জন্য লর্ড কার্জন ‘বিভাজন নীতি’ গ্রহণ করেন। ভারতের বড়লাট নিযুক্ত হয়ে এসেই কার্জন ভারতীয়দের শিক্ষা, সংবাদপত্র ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করেন। ফলে তারা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তিনি উপলব্ধি করেন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং এদেরে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য লর্ড কার্জন ‘বিভাজন নীতি’ গ্রহণ করেন।
১. মুসলিম লীগ গঠন করা হয় কেন?
উত্তর: মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। সর্বভারতীয় আদর্শ নিয়ে ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস গঠিত হলেও এটি হিন্দু ঘেঁষা নীতি অনুসরণ করে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয়। মুসলিমরা এটিকে স্বাগত জানালেও হিন্দুরা কংগ্রেসের নেতৃত্বে এর তীব্র বিরোধিতা করে। শেষ পর্যন্ত তাদের তীব্র বিরোধিতার কারণে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। মুসলমানরা বুঝতে পারে যে, হিন্দু-মুসলিম দুটি আলাদা জাতি। হিন্দুরা কখনোই মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করবে না। ফলে মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য মুসলিম লীগ গঠন করে।
১০. ফরায়েজি আন্দোলন কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে হাজি শরীয়তউল্লাহ ভারতবর্ষে যে সংস্কার আন্দোলন গড়ে তোলেন তা ফরায়েজি
আন্দোলন হিসেবে অভিহিত। হাজি শরীয়তউল্লাহ বাংলার মুসলমান সমাজে নানারূপ কুসংস্কার ও অনৈসলামিক রীতিনীতি লক্ষ করেন। ইংরেজদের অত্যাচারে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। শরীয়তউল্লাহ তাদের জন্য দুঃখ অনুভব করে তাদের উন্নতির জন্য আত্মনিয়োগ করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ফরায়েজি আন্দোলনের সূচনা করেন।
আরও দেখুন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।