ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সৃষ্টিতে পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অংশ পূর্বপাকিস্তান হিসেবে ব্রিটিশদের হাত হতে স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্বপাকিস্তান (পূর্ববাংলা)-এর জনগণের মুখের ভাষা বাংলাকে স্তদ্ধ করাসহ বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আচরণ করলে বাংলার জনগণ তথা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পাকিস্তান সরকারকে এর প্রতিবাদ জানান এবং যুক্তফ্রন্ট তৈরি করে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তথা মুসলিম লীগকে পরাজিত করে।
পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যে বৈষম্যমূলক আচরণ করে তার প্রতিবাদ এবং ছয়দফা দাবিতে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তান সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুললে সরকার শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলার মামলায় গ্রেপ্তার করলে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থান গড়ে ওঠে। সরকার সে অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
১. রাষ্ট্রষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনকে সাংগঠনিক রূপদানের জন্য ১৯৪৭ সালের ১লা অক্টোবর যে পরিষদ গঠিত হয় তাই ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলনের গতিকে বেগবান করতে তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। এ পরিষদের আহবায়ক নির্বাচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রথিতযশা তরুণ অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ নুরুল হক ভূঁইয়া। ভাষা আন্দোলনকে সাংগঠনিক রূপদানের ক্ষেত্রে এ পরিষদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
২. ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ কেন গঠিত হয়?
উত্তর: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রামে পরিষদ গঠিত হয়।
১৯৫২ সালের ২৭শে জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন মুসলিম লীগের অধিবেশনে এবং পল্টন ময়দানের জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে ৩১শে জানুয়ারি মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ইত্যাদি পার্টির সমন্বয়ে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
৩. ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: বাঙালির ছয় দফার দাবিকে নস্যাৎ করার জন্য পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করে তাই ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা।
ছয় দফা দাবি ছিল বাঙালির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার। আর এ ছয় দফার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে সেটিতে আইয়ুব সরকার ভীত হয়ে পড়ে। আর এ কারণেই পাকিস্তান সরকার বাঙালির স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন নস্যাৎ করতে এবং তাদের শাসন ও শোষণ অব্যাহত রাখার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা মামলা দায়ের করে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে।
৪. একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণীয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণীয় হয়ে আছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ্যান দখল করে আছে। এই দিনে বাঙলাকে মাতৃভাষা করার দাবিতে বাঙালি জাতি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার দাবিতে মিছিলরত জনগণের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। ফলে রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে নিহত হয়। পৃথিবীতে বাঙালিই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
৫. ভাষা আন্দোলন কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভাষা আন্দোলন হলো বাঙালির মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার ওপর নানা বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে। প্রথমেই তারা আঘাত হানে বাঙালির ভাষার ওপর। পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনগোষ্ঠীর ৫৬.৪০ শতাংশের মুখের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘিষ্ঠ মাত্র ৩.২৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ভাষা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বাঙালিরা এ বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তারা দেশব্যাপী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে যা ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত।
৬. যুক্তফ্রন্টের বিজয়কে ‘ব্যালট বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করা হয় কেন?
উত্তর: ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। এ কারণে এটিকে ‘ব্যালট বিপ্লব’ বলা হয়।
মুসলিম লীগের কুশাসন থেকে মুক্তি পেতে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন লাভ করে। আর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মাত্র ১০টি আসন লাভ করে। মুসলিম লীগের কুশাসন ও শোষণে জর্জরিত পূর্ব বাংলার মানুষের পুঞ্জীভূত বেদনা ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ছিল যুক্তফ্রন্টের এ বিশাল বিজয়। এ কারণেই যুক্তফ্রন্টের বিজয়কে ‘ব্যালট বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
৭. ছয় দফাকে বাঙালি মুক্তির সনদ বলা হয় কেন?
উত্তর: ছয় দফা দাবিতে বাঙালির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কথা ছিল বলে ছয় দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ছয় দফা কর্মসূচি ছিল প্রথম বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। এতে বাঙালির চরম প্রত্যাশিত স্বায়ত্তশাসনের জোর দাবি উত্থাপন করা হয়। তাছাড়া ছয় দফার মাধ্যমে বাঙালিদের জন্য পৃথক অর্থব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষার দাবি জানানো হয়। এর ফলে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের প্রত্যয় ব্যক্ত হয়। এই ছয় দফার মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিল। তাই এটি বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।
আরও দেখুন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।