ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ, অর্থনৈতিক শোষণ এবং ভাষার দাবিতে পূর্বপাকিস্তানের পূর্ববাংলা।
মানুষ পাকিস্তানের নাগপাস হতে মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন ও স্বাধিকার আন্দোলন এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ ১ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর অস্থায়ী সরকার গঠন, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর গঠন ও সেক্টর কমান্ডারদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ চলে। ৩০ লাখ বাংলার মানুষ শহিদ ও ২ লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম হারান। এসব ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
১. অপারেশন সার্চলাইট কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালায় তা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত।
২৫শে মার্চ রাতের বর্বর হামলায় পাক হানাদার বাহিনী ঢাকা নগরীকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে। রাতের অন্ধকারে অনেক নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত মানুষকে গুলি ও অগ্নিসংযোগ করে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও অন্যান্য স্থানে হামলা করে কয়েকশ ছাত্র ও কয়েকজন শিক্ষককে হত্যা করা হয়। এ রাতে শুধু ঢাকায় ৭০০০ মানুষ নিহত হয়। ঢাকার বাইরেও কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানিদের নৃশংস হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চলে।
২. বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা। যে কারণে এটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এক ঘটনা।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পরদিন থেকে সমগ্র দেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালাত, কলকারখানা সব বন্ধ হয়ে যায়। সমগ্র জনতা বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের প্রতিহত করতে থাকে। মূলত তাঁর এ ভাষণে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েই বাঙালি জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এজন্য বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবিস্মরণীয়।
৩. ২৫শে মার্চকে কালরাত বলা হয় কেন?
উত্তর: ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞের নীল নকশা তৈরি করেন মেজর জেনারেল টিক্কা খান, খাদিম হোসেন, রাও ফরমান আলী প্রমুখ। এ ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ চালায়। তাই এ রাতটি কালরাত হিসেবে পরিচিত।
অপারেশনে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকা নগরীকে মৃত্যুপরীতে পরিণত করে। রাতের অন্ধকারে শহরের নিরীহ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত নাগরিকদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ধানমন্ডি, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও দেশের অন্যত্রও একইভাবে পাক বাহিনী গণহত্যায় মেতে ওঠে।
৪ . মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকা কীরূপ ছিল? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাঙালিরা পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়-অবিচার, হত্যা ও ধ্বংসের চিত্র বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেন। প্রবাসী বাঙালিরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের অর্থ দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সক্রিয় সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া তারা ইউরোপ ও আমেরিকার বড় বড় শহরে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের আয়োজন করেন। যেগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হয়। এক কথায় প্রত্যেক প্রবাসী বাঙালি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অঘোষিত প্রতিনিধি।
৫. মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল কেন?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্য নিয়েই মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধকে সাংগঠনিক রূপ দিতে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। মুজিবনগর সরকারের দায়িত্ব ছিল দক্ষতার সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করে দেশকে শত্রুমুক্ত করা, দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং মুক্তাঞ্চলে বেসামরিক প্রশাসন পরিচালনা করা। মুক্তিযুদ্ধের সফলতার পেছনে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৬. ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের প্রধান কারণটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের প্রধান কারণ ছিল পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর জুলুম, নির্যাতন ও বৈষম্য বঞ্চনা করার জবাব দেওয়া।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন প্রদান করে। এই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা পূর্ব পাকিস্তান শাসনের বৈধতা হারায়।
৭. ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছিল কেন?
উত্তর: পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণের বিপরীতে আওয়ামী লীগের জনকল্যাণমুখী অবস্থানই ১৯৭০-এর
নির্বাচনে দলটিকে জয় এনে দিয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার ও বৈষম্যের কারণে পূর্বে পাকিস্তানের মানুষ ছিল ক্ষুব্ধ। এ প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ছিল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। দলটির পূর্ণাঙ্গ অবস্থান ছিল জনগণের পক্ষে। তাছাড়া শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব রেখেছিলেন। ফলে সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল।
৮. ব্রিগেড ফোর্স কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়, যেটি ব্রিগেড ফোর্স নামে পরিচিত।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১টি সেক্টর ও বেশকিছু সাব সেক্টর ছাড়াও সারা বাংলাদেশকে তিনটি বিগ্রেড ফোর্সে বিভক্ত করা হয়। মেজর জিয়াউর রহমান ‘জেড ফোর্সের’, ‘মেজর জে এম শফিউল্লাহ ‘এস ফোর্সের’ এবং মেজর খালেদ মোশাররফ ‘কে ফোর্সের’ দায়িত্ব পালন করেন।
৯. গেরিলা যুদ্ধ কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: শত্রুবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা করার জন্য যে যুদ্ধ পরিচালিত হয় সেটিই গেরিলা যুদ্ধ নামে পরিচিত। গেরিলা যুদ্ধ সাধারণত অভ্যন্তরীণ রণাঙ্গনে বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে সংঘটিত হয়ে থাকে। এ ধরনের যুদ্ধে আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য যোদ্ধারা নানা কৌশলে শত্রুবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলা করার পূর্ব পর্যন্ত তারা শত্রুবাহিনীকে নিজেদের অবস্থান টের পেতে দেয় না। এভাবে অতর্কিত হামলা করার যে যুদ্ধকৌশল সেটিই গেরিলা যুদ্ধ নামে পরিচিত।
আরও দেখুন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।