ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: ৬৬১ সালে মুয়াবিয়া দামেস্কে উমাইয়া খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে ৬৬০ সালে তিনি অবৈধভাবে মক্কা ও মদিনায় সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন ও তাঁর পক্ষে এ অঞ্চলের জনগণের সমর্থন জোরপূর্বক আদায় করেন। হযরত আলী ৪,০০০ সৈন্য প্রেরণের মাধ্যমে পুনরায় মক্কা ও মদিনার আনুগত্য লাভ করেন। এরূপ ঘটনা প্রবাহের এক পর্যায়ে শান্তিপ্রিয় খলিফা মিশর ও সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব হযরত মুয়াবিয়া (রা.) কে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। তাঁরা উভয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানে থাকার স্বীকার করেন।


ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

১. মুয়াবিয়া (রা.)-কে আরবদের প্রথম রাজা বলা হতো কেন?

উত্তর: মুয়াবিয়া (রা.) উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রচলন করেন, তাই তাকে আরবদের প্রথম রাজা বলা হয়।

উচ্চাভিলাষী উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুয়াবিয়া খিলাফত লাভের সাথে সাথেই সাধারণতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। মুয়াবিয়া হযরত ইমাম হাসান (রা.)-এর সাথে স্বাক্ষরিত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে ৬৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা মুগিরার প্ররোচনায় তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ইয়াজিদকে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের পথ সুগম করেন। এজন্য মুয়াবিয়া (রা.)-কে আরবদের প্রথম রাজা বলা হয়।

২. খলিফা আবদুল মালিককে রাজেন্দ্র বলা হয় কেন?

উত্তর: আবদুল মালিককে রাজেন্দ্র বা Father of kings বলা হয়। কারণ তার পরবর্তী চারজন খলিফাই আবদুল মালিকের পুত্র ছিলেন।

খলিফা আবদুল মালিকের চার জন পুত্র আল ওয়ালিদ (৭০৫-৭১৫ খ্রি.), সুলাইমান (৭১৫-৭১৭ খ্রি.), দ্বিতীয় ইয়াজিদ (৭২০-৭২৪ খ্রি.) এবং হিশাম (৭২৪-৭৪৩ খ্রি.) পরবর্তীকালে খলিফা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ঐতিহাসিক পি. কে. হিটি বলেন, “আবদুল মালিক এবং তার উত্তরাধিকারী চার পুত্রের শাসনকালে দামেস্কের এ রাজবংশ শৌর্যবীর্য ও গৌরবের চরম শিখরে আরোহণ করে।” এ কারণে আবদুল মালিককে রাজেন্দ্র বলা হয়।

৩. খলিফা আবদুল মালিকের আরবি ভাষা জাতীয়করণ বিষয়ে ধারণা দাও।

উত্তর: রাষ্ট্রকে আরবীয়করণের লক্ষ্যে আবদুল মালিক আরবি ভাষা জাতীয়করণ করেন।

খলিফা আবদুল মালিক রাষ্ট্রকে জাতীয়করণ এবং সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য পূর্ব থেকে চালুকৃত ফারসি, সিরীয় ও গ্রিকসহ প্রচলিত বিভিন্ন ভাষার বিলোপ সাধন করে আরবিকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দেন এবং সরকারি কাজে ও হিসাবপত্র লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে আরবি ভাষার ব্যবহারের নির্দেশ দেন। ৬৯৫-১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এ মর্মে একটি আদেশ জরি করেন।

৪. খলিফা সুলাইমানকে কেন আশীর্বাদের চাবি বলা হয়?

উত্তর: হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কর্তৃক বন্দিকৃত হাজার হাজার বন্দিকে মুক্তিদান করার কারণে খলিফা সুলায়মানকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয়।

মুক্তিদান করার কারণে খলিফা সুলায়মানকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয়। পূর্বাঞ্চলের শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তার কারাগারে হাজার হাজার মানুষকে বন্দি করে রেখেছিলেন। খলিফা সুলায়মান এ সকল বন্দিকে মুক্তি দেন। এর ফলে তিনি জনগণের নিকট বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিতে পরিণত হন এবং ‘সিফতাহুল-খায়র’ বা আশীর্বাদের চাবি আখ্যাপ্রাপ্ত হন।

৫. সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: আরবদের কিছু বাণিজ্য তরি সিন্ধু জলদস্যু কর্তৃক লুণ্ঠিত হলে হাজ্জাজের দাবি অনুসারে রাজা দাহির কর্তৃক ক্ষতিপূরণ দানে অস্বীকৃতিই ছিল সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ।

আরবদের ৮টি বাণিজ্য তরি সিন্ধুর দেবল কন্দরে জলদস্যু কর্তৃক লুণ্ঠিত হলে দামেস্কের পূর্বাঞ্চলীয় শাসনকর্তা হাজ্জাজ সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু রাজা দাহির এ ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেন। ফলে সিন্ধু আক্রমণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। যা ছিল সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ।

৬. উমাইয়া কারা? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উমাইয়া আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশের একটি শাখা।

কুরাইশ গোত্রের বিখ্যাত দলপতি ছিলেন আবদে মানাফ। তিনি মহানবি (স.)-এর পঞ্চম ঊর্ধ্বতন পুরুষ ছিলেন। তার ছয় পুত্র-সন্তানের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুস শামস। তিনি মহানবি (স.)-এর প্রপিতামহ হাশিমের সহোদর ভাই ছিলেন। আবদুস শামসের পুত্র উমাইয়া এবং তার নামানুসারেই খলিফা মুয়াবিয়ার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ উমাইয়া বংশ নামে পরিচিতি লাভ করে।

৭. দিওয়ানুল বারিদ কী? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: খলিফা মুয়াবিয়া (রা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ডাক বিভাগই ‘দিওয়ানুল বারিদ’ হিসেবে পরিচিত। দিওয়ানুল বারিদ রাষ্ট্রের সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য কাজ করত। সাম্রাজ্যের সরকারি ও সাধারণ সংবাদ আদান- প্রদানের জন্য মুয়াবিয়া প্রতি ১২ মাইল অন্তর একটি করে ডাকঘর স্থাপন করেন। ঘোড়া ও উটের সাহায্যে এক ডাকঘর থেকে অন্য ডাকঘরে সংবাদ আদান-প্রদান করা হতো। এ বিভাগকে বলা হতো ‘দিওয়ান আল বারিদ’ আর কর্মকর্তাকে বলা হতো ‘সাহিব উলবারিদ’।

৮. আবদুল মালিককে কেন উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়?

উত্তর: সাম্রাজ্যের সব বিদ্রোহ দমন করে উমাইয়া বংশের শাসনকে সুদৃঢ় করায় আবদুল মালিককে উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে কুফার শাসনকর্তা মুসাবের বিদ্রোহ এবং ৬৯২ খ্রিষ্টাব্দে হেজাজে নিজেকে খলিফা ঘোষণাকারী আব্দুল্লাহ বিন যুবায়েরের বিদ্রোহ সফলভাবে দমন করেন। এর ফলে কারবালা যুদ্ধের পর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়া উমাইয়া বিরোধী বিদ্রোহের অবসান ঘটে। এছাড়া প্রশাসনকে আরবীয়করণ করে তিনি উমাইয়া খিলাফতের ভিত মজবুত করেন। এজন্য তাকে উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

৯. ওমর বিন আবদুল আজিজকে পঞ্চম খলিফা বলা হয় কেন?

উত্তর: উমাইয়াদের স্বেচ্ছাচারী নীতি বর্জন করে খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ অনুসারে শাসন পরিচালনা করার কারণে ওমর বিন আবদুল আজিজকে পঞ্চম খলিফা বলা হয়।

উমাইয়া খিলাফতের সাধু পুরুষ ওমর বিন আবদুল আজিজ ছিলেন ধর্মপ্রাণ, ন্যায়নিষ্ঠ এবং সরল প্রকৃতির। বর্বরতা, বড়যন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ সম্প্রসারণবাদ, বিলাসিতা, অনাচার ও অধর্ম যখন সমস্ত উমাইয়া খিলাফতকে গ্রাস করতে থাকে তখন তিনি শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি উমাইয়াদের স্বেচ্ছাচারী নীতি বর্জন করে খুলাফায়ে রাশেদিনের পথ অনুসরণ করেন। এ জন্য তাকে পঞ্চম খলিফা বলা হয়।


আরও দেখুন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *