ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ২য় অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ২য় অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: ভারতে মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবেক বিজেতা, সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন যোগ্যতাসম্পন্ন শাসক হিসেবে অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ঐতিহাসিক ড. ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, “Aibak was powerful and capable ruler.” অর্থাৎ “আইবেক শক্তিশালী এবং দক্ষশাসক ছিলেন।” তিনি তুর্কিস্তানের অধিবাসী ছিলেন। কদাকার আকৃতির হওয়া সত্ত্বেও ড. ঈশ্বরী প্রসাদের মতে, “Aibak was endowed with laudable qualities and admirable impressions.” অর্থাৎ “আইবেক প্রশংসনীয় গুণাবলি ও অনুভূতির অধিকারী ছিলেন।”

তাঁর প্রতিষ্ঠিত দাস বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ইলতুৎমিশ, নাসিরউদ্দিন, গিয়াসউদ্দিন বলবন প্রায় ৯০ বছরকাল শাসনকার্য পরিচালনা করে ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য বৃদ্ধি এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিহাসে এ বংশটি মামলুক বা দাস বংশ নামে খ্যাতি লাভ করে। এরপর জালাল উদ্দিন খলজি কর্তৃক খলজি বংশ, গিয়াসউদ্দিন তুঘলক কর্তৃক তুঘলক বংশ, খিজির খাঁ কর্তৃক সৈয়দ বংশ এবং বাহলুল লোদি কর্তৃক লোদি বংশ প্রতিষ্ঠা হয়ে ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সুলতানগণ শাসন কার্য পরিচালনা করেন।


ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ২য় অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

১. ক্ষমতা গ্রহণের পর ইলতুৎমিশের সমস্যা চিহ্নিত কর।

উত্তর: দিল্লি সালতানাতের ক্ষমতা গ্রহণের পর সুলতান ইলতুৎমিশ অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক নানা সমস্যার মুখোমুখি হন।

১২১১ খ্রিষ্টাব্দে ইলতুৎমিশ দিল্লির সুলতান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের বিদ্রোহের সম্মুখীন হন। উচ ও মুলতানের শাসনকর্তা নাসিরউদ্দিন কুবাচা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি ভাতিন্দা, গুহরাম, সারাসূতি প্রভৃতি এলাকা দখল করেন। গজনির শাসনকর্তা তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ দিল্লির সার্বভৌম ক্ষমতা লাভের চেষ্টা চালায়। দিল্লির অধীনতা অস্বীকার করে আলী মর্দান খলজি বাংলায় তৎকালীন রাজধানী লাখনৌতি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এসব অভ্যন্তরীণ সমস্যার পাশাপাশি এ সময় ভারতে মোঙ্গল আক্রমণেরও আশঙ্কা দেখা দেয়।

২. রক্তপাত ও কঠোর নীতি কেন গ্রহণ করা হয়েছিল?

উত্তর: অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বহিরাক্রমণ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য দিল্লীর সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন রক্তপাত ও কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।

গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময়ে তুর্কি অভিজাতদের ষড়যন্ত এবং বহিরাক্রমণ মারাত্মক রূপ ধারণ করে। সুলতান বলবন ষড়যন্ত্রপরায়ণ অভিজাতদের দমনের জন্য কঠোর শাসন নীতি গ্রহণ করেন। তাছাড়া মোঙ্গলদের আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্যও তিনি কঠিন দৃঢ়তার পরিচয় দেন। সুতরাং অভ্যন্তরীণ কলহ ও শত্রু দমনের জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন রক্তপাত ও কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।

৩. দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির প্রধান কারণ কী?

উত্তর: মুহাম্মদ বিন তুঘলকের দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল বিত্তশালী কৃষকদের বিদ্রোহ দমন করা। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল হিন্দু বিদ্রোহ দমন এবং জমিদারদের দর্পচূর্ণ করা। আবার অনেকেই মনে করেন রাজধানী স্থানান্তর, খোরাসান ও কারাচিল অভিযানের ব্যর্থতা এবং প্রতীকী মুদ্রার বিফলতার কারণেই সুলতান দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করেন। কর বৃদ্ধির মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বারানী বলেন যে, সুলতান দোয়াবে দশ হাতে বিশুগণ কর বৃদ্ধি করেন।

৪. কুতুব মিনার নামকরণের কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: মহান সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নামানুসারে কুতুব মিনারের নামকরণ করা হয়।

দিল্লি সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি বেশ অনুরাগী। স্থাপত্য শিল্পের প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তাই তিনি দিল্লিতে একটি বিজয়স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এ সময় কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী নামে একজন মহান সাধক সুলতানের সংস্পর্শে আসেন। এ সাধককে সুলতান খুবই পছন্দ করতেন। তাই তার নামানুসারে এ বিজয়স্তম্ভের নামকরণ করা হয় কুতুব মিনার।

৫. কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রতিষ্ঠিত বংশকে দাসবংশ বলা হয় কেন?

উত্তর: কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রথম জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন বলে তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে ‘মামলুক’ বা ‘দাস বংশ’ বলা হয়।

১২০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে জুন কুতুবউদ্দিন আইবেক সুলতান উপাধি গ্রহণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। কুতুবউদ্দিন আইবেকের সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে ভারতে স্বাধীন মুসলিম শাসন ও একটি নতুন রাজবংশের সূচনা হয়। ১২৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লি শাসনকারী এ বংশের ১১ জন শাসকের মধ্যে প্রথম তিনজন ছিলেন ক্রীতদাস। তাই কুতুবউদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে ভারতের ইতিহাসে ‘দাস বংশ’ বলা হয়।

৬. দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তরের প্রধান কারণটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: মুহাম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তরের প্রধান কারণ ছিল এর ভৌগোলিক অবস্থান ও গুরুত্ব।

সুলতান দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করে দাক্ষিণাত্যের হিন্দুদের বিদ্রোহাত্মক মনোভাব লক্ষ করে তাদের ওপর আধিপত্য ও কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। মোঙ্গল আক্রমণের আশঙ্কা দূর করে রাজধানী নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে দৌলতাবাদই ছিল উপযুক্ত স্থান। দাক্ষিণাত্যের প্রাচুর্য ও সম্পদের অধিকতর সদ্ব্যবহারের জন্য দৌলতাবাদে রাজধানী স্থাপন আধিক অসীচীন বলে সুতলান মনে করেছিলেন। মূলত শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি রাজধানী দৌলতাবাদে স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

৭ . মামলুক বা দাস বংশের পরিচয় দাও।

উত্তর: ভারতে কুতুবউদ্দিন আইবেক-এর প্রতিষ্ঠিত রাজবংশই ইতিহাসে মামলুক বা দাস বংশ নামে পরিচিত।

তুর্কি শব্দ ‘মামলুক’ এর শাব্দিক অর্থ দাস। সুলতান মুহাম্মদ ঘুরির ক্রীতদাস কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন এ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। দিল্লি সালতানাত পর্বে ১২০৬ থেকে ১২৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ বংশের মোট ১১ জন শাসক ৮৪ বছর ভারত শাসন করেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রাথমিক জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন বলে এই রাজবংশকে মামলুক বা দাস বংশ বলে অভিহিত করা হয়।

৮. দিল্লি সালতানাতে ‘চল্লিশ চক্র’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: সুলতান ইলতুৎমিশের সময়কার (১২১১-১২৩৬ খ্রি.) চল্লিশজন প্রভাবশালী ও সুযোগ্য ক্রীতদাস নিয়ে গঠিত সংগঠনকে চল্লিশ চক্র বলা হয়।

সুলতান ইলতুৎমিশের সময় চল্লিশজন ক্রীতদাসকে নিয়ে ‘বন্দেগান-ই-চেহেলগান’ নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। এটি চল্লিশ চক্র নামে পরিচিত। ইলতুৎমিশের সময় তারা শাসনকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার মৃত্যুর পর চল্লিশ চক্রের দৌরাত্ম্যের ফলে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেন।


আরও দেখুন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *