উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: একজন উৎপাদক যে প্রক্রিয়ায় তার উৎপাদিত পণ্যটি চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে পৌছায় তাকে বণ্টন প্রণালি বলে। এ প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট পণ্যটি সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে ও সর্বোত্তম উপায়ে ভোক্তাদের কাছে পৌছানো হয়। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, উৎপাদনকারীর কাছ থেকে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে পণ্যসামগ্রী বা সেবাকর্ম পৌছানোর কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলিকে সম্মিলিতভাবে বণ্টন প্রণালি বলে।


উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-১. ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বণ্টন প্রণালি কেন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উৎপাদিত পণ্য সঠিকভাবে বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করতে বণ্টন প্রণালির প্রয়োজন হয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য প্রকৃত ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে বণ্টন প্রণালির প্রয়োজন হয়। উৎপাদকের উৎপাদিত পণ্য প্রথমে পাইকার, পাইকার হতে খুচরা ব্যবসায়ী এবং খুচরা ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। এসব কার্যক্রম বণ্টন প্রণালির মাধ্যমে সম্পাদিত হয় বিধায় ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বণ্টন প্রণালির প্রয়োজন রয়েছে।

প্রশ্ন-২. বণ্টন প্রণালি বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে পণ্য বা সেবা উৎপাদনকারীর নিকট হতে ভোক্তার কাছে পৌঁছায় তাকে বণ্টন প্রণালি বলে। বণ্টন প্রণালি উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। বণ্টন প্রণালিতে সাধারণত মধ্যস্বব্যবসায়ীরা অবস্থান করেন। ভোগ্য পণ্যের বণ্টন প্রণালি শিল্প পণ্যের বণ্টন প্রণালি অপেক্ষা দীর্ঘ হয়। বণ্টন প্রণালি ছাড়া বিপণনের জটিল কাজগুলো সম্পাদন করে ভোক্তাদের নিকট পণ্য পৌছানো সম্ভব হবে না। সংক্ষেপে বলা যায়, বণ্টন প্রণালি হলো ভোক্তাদের নিকট পণ্য পৌছানোর মাধ্যম।

প্রশ্ন-৩. দুই স্তরবিশিষ্ট বণ্টন প্রণালি ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যে বণ্টন প্রণালিতে উৎপাদনকারী ও ভোক্তার মধ্যে দুজন মধ্যস্থব্যবসায়ী অবস্থান করে তাকে দুই ত্তরবিশিষ্ট বণ্টন প্রণালি বলা হয়।

দুই স্তরবিশিষ্ট বণ্টন প্রণালিতে উৎপাদনকারী ও ভোস্তার মধ্যে সাধারণত পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জড়িত থেকে পণ্য সরবরাহের কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকেন। দুই স্তরবিশিষ্ট বন্টন প্রণালি ব্যবসায়ে প্রচুর পরিমাণে লক্ষ করা যায়।

প্রশ্ন-৪. পণ্য বণ্টন প্রণালিতে কাম্য পরিমাণ মধ্যস্বব্যবসায়ী থাকা বাঞ্ছনীয় কেন?

উত্তর: উৎপাদনকারী এবং ভোক্তা বা শিল্পে ব্যবহারকারীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে যারা পণ্য বণ্টনে সহায়তা করে তাদেরকেই মধ্যস্থব্যবসায়ী বলে।

পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ী, দালাল, ফড়িয়া, কমিশন এজেন্ট বা ডিলার ইত্যাদি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মধ্যস্থব্যবসায়ী হিসেবে বিবেচিত হয়। ভোক্তাদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর জন্য মধ্যস্থব্যবসায়ীদের সাহায্য নেওয়া হলেও প্রতিটি মধ্যস্থব্যবসায়ী তাদের কাজের বিনিময়ে নিদিষ্ট পরিমাণ কমিশন বা মুনাফা অর্জন করে। এতে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। আবার বণ্টন প্রণালিতে একেবারে মধ্যস্থব্যবসায়ী না থাকলেও অনেক সময় ভোক্তারা পণ্য ভোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তাই বলা যায়, মধ্যস্থব্যবসায়ীর সংখ্যা খুব বেশি বা খুব কম না হয়ে কাম্য পরিমাণে থাকা উচিত।

প্রশ্ন-৫. ‘বণ্টন প্রণালির সদস্যরা উৎপাদকের জন্য অর্থসংস্থান করে’- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উৎপাদনকারীর কাছ থেকে পণ্য বা সেবা ভোক্তার কাছে পৌছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যে সমস্ত ব্যক্তি, সংগঠন ও ফার্ম জড়িত তাদের কার্যক্রমকে সম্মিলিতভাবে বণ্টন প্রণালি বলে।

বণ্টন প্রণালির সদস্যরা উৎপাদনকারী ও ক্রেতাদের অর্থসংস্থানে সহায়তা করেন। এরা পণ্যের জন্য উৎপাদনকারীকে অগ্রিম অর্থ প্রদান করেন আবার কখনও নগদে পণ্য ক্রয় করে উৎপাদনকারীর কার্যকরী ও চলতি মূলধনের চাহিদা পূরণ করেন। অন্যদিকে বাকিতে বা কিস্তিতে পণ্য বিক্রয় করে ক্রেতাদের অর্থসংস্থানে সহায়তা করেন।

প্রশ্ন-৬. ‘বন্টন প্রণালি তথ্য সরবরাহ করে’- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উৎপাদনকারীর নিকট থেকে পণ্য বা সেবা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যে সমস্ত ব্যক্তি, সংগঠন, ফার্ম ও মধ্যস্থব্যবসায়ী জড়িত, তাদের কাজকে সম্মিলিতভাবে বণ্টন প্রণালি বলে। বণ্টন প্রণালিতে অবস্থানকারী মধ্যস্থব্যবসায়ীরা বাজার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে উৎপাদককে এবং পণ্য সংক্রান্ত তথ্য ভোক্তাকে দিয়ে থাকেন। এর ফলে পণ্য উৎপাদনকারীরা মধ্যস্থব্যবসায়ীদের নিকট থেকে বাজারে পণ্যের

চাহিদা, ভোক্তার বুচি সম্পর্কে জানতে পারেন। অন্যদিকে ভোক্তারা নতুন পণ্য ও এর গুণাগুণ সম্পর্কে মধ্যস্বব্যবসায়ীদের নিকট থেকে জানতে পারেন। এভাবে মধ্যস্থবাবসায়ীরা পণ্য উৎপাদক এবং এর ক্রেতা উভয় পক্ষকেই বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করেন।

প্রশ্ন-৭. ‘বণ্টন প্রণালির সদস্যরা ঝুঁকি নেন’- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উৎপাদনকারীর নিকট থেকে পণ্য বা সেবা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যে সমস্ত ব্যক্তি, সংগঠন, ফার্ম ও মধ্যস্থব্যবসায়ী জড়িত তাদের কার্যক্রমকে সম্মিলিতভাবে বণ্টন প্রণালি বলে।

ব্যবসায়ের প্রতিটি পর্যায়েই কমবেশি ঝুঁকি বিদ্যমান। যেমন- চাহিদার পরিবর্তন হওয়া, পণ্য বিক্রয় না হওয়া, পরিবহন ও’ গুদামজাতকরণের সময় পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, অগ্নিকাণ্ড, চুরি বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা ইত্যাদি। এসব অনিশ্চয়তাকে মেনে নিয়েই বণ্টন প্রণালির সদস্যরা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সুতরাং, অধিকাংশ ঝুঁকিই বণ্টন প্রণালির সদস্যদেরকে বহন করতে হয়।

প্রশ্ন-৮. ‘বণ্টন প্রণালি উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে’- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পণ্য বা সেবা উৎপাদনকারীর নিকট হতে ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছায় তাকে বণ্টন প্রণালি বলে।

উৎপাদক ও ভোক্তারা সবসময় একই স্থানে অবস্থান করে না। ভোক্তারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন। এসব দূরবর্তী ক্রেতাদের নিকট বণ্টন প্রণালির মাধ্যমে পণ্য বা সেবা পৌঁছে। এভাবে উৎপাদকের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তারা ভোগের সুযোগ পায়। তাই বলা যায়, বণ্টন প্রণালি উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।

প্রশ্ন-৯. বস্তুগত বণ্টন বলতে কী বোঝায়? উত্তর: বস্তুগত বণ্টন হলো পণ্যের বণ্টন।

কটন প্রণালির সাহায্যে পণ্য উৎপাদনকারীর কাছ থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। এ ধরনের পণ্য দৃশ্যমান এবং হাত বদলের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে মালিকানা হস্তান্তর হয়। তাই বস্তুগত বণ্টন বলতে পণ্যের বণ্টন বোঝানো হয়ে থাকে।

প্রশ্ন-১০. পণ্য বিক্রির জন্য বণ্টন প্রণালি কেন প্রয়োজন?

উত্তর: বণ্টন প্রণালি হলো এমন একটি পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে উৎপাদনকারী থেকে পণ্যসামগ্রী ভোক্তার কাছে পৌছানো হয়।

প্রকৃতিগতভাবে অনেক পণ্যই একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে জন্মায় বা উৎপাদন করা হয়। কিন্তু পণ্যের চাহিদা বিদ্যমান থাকে সব অঞ্চলে। উৎপাদক বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে তাদের চাহিদা পূরণ করে। নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে পণ্য অন্য অঞ্চলে নেওয়ার জন্য বণ্টন প্রণালি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এ কারণেই পণ্য বিক্রির জন্য বণ্টন প্রণালির প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন-১১. “সরাসরি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ভোক্তাসাধারণ লাভবান হয়”- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উৎপাদনকারী যখন কোনো মধ্যস্থব্যবসায়ীর সহায়তা ছাড়া সরাসরি ভোত্তার কাছে পণ্যদ্রব্য পৌছে দেয় তখন তাকে সরাসরি বিক্রয় বলা হয়।

এর মাধ্যমে উৎপাদনকারী খুব সহজে ভোক্তার প্রয়োজন উপলব্ধি করতে পারে। এতে তাদের চাহিদামতো পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখা সহজ হয়। তাছাড়া এক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য অপেক্ষাকৃত কম হয়ে থাকে। কারণ এখানে মধ্যস্বব্যবসায়ীর উপস্থিতি থাকে না। ফলে ভোক্তারা অল্প দামে পণ্য ভোগের সুযোগ পায়। এসব কারণেই তারা লাভবান হয়।

প্রশ্ন-১২. “মধ্যস্থব্যবসায়ী পণ্য কিনতে প্ররোচিত করে” ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উৎপাদকের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে চূড়ান্ত ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর কাছে পৌছে দেয়, তাদেরকে মধ্যস্থব্যবসায়ী বলে।

উৎপাদকের পক্ষে সব সময় চূড়ান্ত ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে মধ্যস্থব্যবসায়ীর (যেমন: খুচরা ব্যবসায়ী বা পাইকার) কাছ থেকেই ক্রেতারা পণ্য কিনে। এ অর্থে, মধ্যস্থব্যবসায়ীরাই চূড়ান্ত ক্রেতার সম্মুখীন হয়। ফলে তাদেরকে পণ্যের গুণাগুণ বলা, পরিবহন মোড়কিকরণ প্রভৃতি বিপণন কার্যাবলি মধ্যস্থব্যবসায়ীকেই করতে হয়। তার বিপণন কাজগুলো করা হয় ভোক্তাকে পণ্য কিনতে প্ররোচিত করার জন্যই। তাই বলা যায়, মধ্যশ্বব্যবসায়ীরা পণ্য কিনতে প্ররোচিত করে।


আরও দেখুন: উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *