উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ৭ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ৭ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: জনাব আব্দুর রহমান মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে চালের পাইকারি বাজারের একজন মহাজন। তিনি উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, বগুড়া, নওগাঁ এলাকার চাল উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে চাল কিনে তা মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে বিক্রি করেন। এ মার্কেটে চালের পাইকারি বাজারের বৈশিষ্ট্য হলো- কোনো ভোক্তার কাছে চাল বিক্রি করা হয় না কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। সুতরাং, আব্দুর রহমান ব্যবসায় পাইকারি ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত।


উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ৭ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-১. বন্টন প্রণালিতে সর্বশেষ ব্যবসায়ী কে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উৎপাদনকারী, পাইকার বা অন্য কোনো উৎস থেকে পণ্য কিনে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে বিক্রির সব কাজকে খুচরা ব্যবসায় বলে।

উৎপাদক পণ্য উৎপাদনের পরে তা পাইকার কিনে নিয়ে যান। পাইকার তার কেনা পণ্য খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। খুচরা ব্যবসায়ী আবার ঐসব পণ্যদ্রব্য চূড়ান্ত ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে বণ্টন প্রণালির সমাপ্তি টানেন। তাই বলা যায়, খুচরা ব্যবসায় হলো বণ্টন প্রণালির সর্বশেষ ধাপ।

প্রশ্ন-২, ‘খুচরা ব্যবসায়ী সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করে”- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পাইকার বা অন্য কোনো উৎস থেকে পণ্য কিনে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে বিক্রি করাকে খুচরা ব্যবসায় বলে। উৎপাদক বা আমদানিকারকদের কাছ থেকে পণ্য প্রথমে পাইকারদের কাছে পৌঁছায়। পাইকাররা সেসব পণ্য খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌছে দেয়। খুচরা ব্যবসায়ের পর আর কোনো মধ্যস্বব্যবসায়ী থাকে না। তাই বলা যায়, খুচরা ব্যবসায়ী সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করে।

প্রশ্ন-৩. খুচরা ব্যবসায়কে ক্ষণস্থায়ী ব্যবসায় বলা হয় কেন?

উত্তর: পাইকার বা অন্য কোনো উৎস থেকে পণ্য কিনে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে বিক্রির কার্যাবলিকে খুচরা ব্যবসায় বলে। খুচরা ব্যবসায় সাধারণত একমালিকানা এবং অংশীদারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। মালিকের অক্ষমতা বা অংশীদারদের দ্বন্দ্বের কারণে যেকোনো সময় তা বিলুপ্ত হতে পারে। এজন্য খুচরা ব্যবসায়কে ক্ষণস্থায়ী ব্যবসায় বলা হয়।

প্রশ্ন-৪. ‘খুচরা ব্যবসায়ী অল্প পরিমাণ পণ্য বিক্রি করে’- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পাইকার বা অন্য কোনো উৎস থেকে পণ্য কিনে চূড়ান্ত ভোক্তাদের কাছে বিক্রি সংক্রান্ত সব কাজকে খুচরা ব্যবসায় বলে।

এই ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য হলো পাইকার বা অন্য কোনো উৎস থেকে পণ্য কিনে ভোক্তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তা অল্প অল্প পরিমাণে বিক্রি করা। কেননা, চূড়ান্ত ভোক্তারা সবসময় পরিমাণে কম পণ্য কেনে। যেমন- কলম, খাতা, বই, মুদি সামগ্রী ইত্যাদি। পণ্য ভোক্তারা অল্প পরিমাণে কেনে। তাই খুচরা বিক্রেতাদের এককপ্রতি বিক্রির পরিমাণ কম হয়।

প্রশ্ন-৫. ‘খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় একে অন্যের থেকে ভিন্ন’ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ী উভয়ে মধ্যস্থব্যবসায়ী হলেও তাদের উদ্দেশ্য, গঠন প্রণালি, কার্যাবলি, প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয়ে যথেষ্ট ভিন্নতা দেখা যায়।

যে ব্যবসায়ী উৎপাদক বা আমদানিকারকের কাছ থেকে পণ্যদ্রব্য সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেন তাকে পাইকার বলা হয়। আর যে ব্যবসায়ী পাইকারের কাছ থেকে পণ্যদ্রব্য সংগ্রহ করে চূড়ান্ত ক্রেতার কাছে অল্প অল্প করে বিক্রি করেন তাকে খুচরা ব্যবসায়ী বলা হয়। পাইকার বেশি পরিমাণ পণ্য কেনে। অপরদিকে, খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারদের কাছ থেকে অল্প অল্প পণ্য কিনে থাকে।

প্রশ্ন-৬. খুচরা ব্যবসায় কীভাবে উৎপাদনকারীকে পরামর্শদানে সহায়তা করে?

উত্তর: পাইকার বা অন্য কোনো উৎস থেকে পণ্য কিনে চূড়ান্ত ভোস্তার কাছে বিক্রির কার্যাবলিকে খুচরা ব্যবসায় বলে।

ক্রেতাদের সাথে সরাসরি সম্পর্ক থাকে খুচরা ব্যবসায়ীর। তারা ক্রেতার পছন্দ, অপছন্দ, রুচি, ব্যবহার, প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা উৎপাদনকারীকে সরবরাহ করে। এতে উক্ত তথ্য জেনে উৎপাদনকারীও প্রয়োজনীয় চাহিদাসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে পারে। এভাবেই খুচরা ব্যবসায় উৎপাদনকারীকে পরামর্শদানে সহায়তা করে।

প্রশ্ন-৭. খুচরা ব্যবসায় কীভাবে পণ্যের মান উন্নয়নে সহায়তা করে?

উত্তর: উৎপাদক, পাইকার বা অন্য কোনো উৎস থেকে পণ্য কিনে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে বিক্রির সব কাজকে খুচরা ব্যবসায় বলে।

পণ্যের মান উন্নয়নে খুচরা ব্যবসায়ী প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে না পারলেও পরোক্ষভাবে এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বণ্টন প্রণালির শেষ প্রান্তে অবস্থান করে এবং সরাসরি ভোক্তাদের সাথে সম্পৃক্ত। তাই ভোক্তারা পণ্যের মান, দাম, ডিজাইন, প্যাকিং ইত্যাদি বিষয়ে নানান অভাব-অভিযোগ ও পরামর্শ খুচরা ব্যবসায়ীদের জানায়। ভোক্তাদের এ ধরনের তথ্য খুচরা ব্যবসায়ীরা কখনও উৎপাদকের কাছে সরাসরি আবার কখনও পাইকারদের মাধ্যমে জানিয়ে থাকে। ফলে তাদের এ তথ্যের ভিত্তিতে পণ্যের মান উন্নয়নে উৎপাদকরা সচেষ্ট হয়।

প্রশ্ন-৮. বিপণনে খুচরা ব্যবসায় কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: উৎপাদক, পাইকার বা অন্য কোনো উৎস থেকে পণ্য কিনে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে বিক্রির সব কাজকে খুচরা ব্যবসায় বলে। এক্ষেত্রে সরাসরি ক্রেতাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হয় বলে বিপণনে এই ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ।

খুচরা ব্যবসায়ের মাধ্যমে অধিকাংশ ভোক্তা পণ্য বা সেবা পেয়ে থাকে। তাছাড়া, খুচরা ব্যবসায় পণ্য বা সেবা কেনা, বেচা, গুদামজাতকরণ, পরিবহন ইত্যাদি বিপণন সহায়ক কার্যাবলি সম্পাদন করে। তাছাড়া, বাজার সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উৎপাদক বা পাইকারকে সরবরাহ করা খুচরা ব্যবসায়ীর কাজ। তাই বিপণনে খুচরা ব্যবসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন-৯. ‘ভ্রাম্যমাণ খুচরা ব্যবসায় হলো ভোক্তাদের দ্বারে দ্বারে পণ্য বিক্রি’- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যে ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো স্থায়ী দোকান থাকে না এবং তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে ঘুরে পণ্য বিক্রি করে তাকে ভ্রাম্যমাণ খুচরা ব্যবসায় বলে।

এ ধরনের ব্যবসায়ীদের মূলধন কম থাকায় কোনো স্থায়ী দোকান থাকে না। পণ্য বিক্রির জন্য এরা ভোক্তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরাসরি পণ্য বিক্রি করে। এজন্যই ভ্রাম্যমাণ খুচরা ব্যবসায় বলতে ভোক্তাদের দ্বারে দ্বারে পণ্য বিক্রিকে বোঝায়।

প্রশ্ন-১০. ‘উৎপাদন বিকেন্দ্রীভূত, কিন্তু বিক্রি কেন্দ্রীভূত’- বিভাগীয় বিপণির আলোকে ব্যাখ্যা করো।
অথবা, বিভাগীয় বিপণি বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: একই ভবনে অবস্থিত এবং একই মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে পৃথক পৃথক বিভাগের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থাকে বিভাগীয় বিপণি বলে।

বৃহদায়তন ও খুচরা বিপণির অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যার মধ্যে কেন্দ্রীভূত বিক্রি এবং বিকেন্দ্রীভূত ক্রয় অন্যতম। বিভাগীয় বিপণির পণ্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত হয় এবং সেসব স্থান হতে সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বিক্রি করে। তাই বলা যায়, বিভাগীয় বিপণির ক্রয় বা উৎপাদন বিকেন্দ্রীভূত, কিন্তু বিক্রি কেন্দ্রীভূত।

প্রশ্ন-১১. সুবিধা স্টোর বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যে ঘুচরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে দৈনন্দিন দরকারি পণ্য যেমন- মুদি পণ্য, সংবাদপত্র, ঔষধ, ফাস্টফুড প্রভৃতি নিয়ে আবাসিক এলাকাগুলোয় দ্রুত বিক্রির প্রচেষ্টা চালানো হয় তাকে সুবিধা স্টোর বলে।

এ স্টোরগুলোয় পণ্যমূল্য সুপার স্টোর থেকে কিছুটা বেশি হয়। তবে এরা দীর্ঘ সময় খোলা থাকে বলে ক্রেতারা প্রয়োজনমতো এসে এখান থেকে তাদের পণ্যটি কিনতে পারে। এগুলো সাধারণত শহরের কোনো ব্যস্ত রাস্তার পাশে গড়ে ওঠে। আমাদের দেশের ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা ‘সুপার ভ্যালু সপ’ হলো সুবিধা স্টোর বা কনভিনিয়েন্স স্টোরের উদাহরণ।


আরও দেখুন: উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *