ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১০ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১০ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: ইংরেজি শব্দ Entrepreneurship-এর বাংলা পরিভাষা হচ্ছে উদ্যোগ বা ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ। আর Entrepreneur শব্দটি ফরাসি শব্দ Entreprender থেকে উদ্ভব হয়েছে। এর অর্থ হলো ‘To undertake’ অর্থাৎ কোনো কিছু করার দায়িত্ব নেওয়া। তাই বলা যায়, দায়িত্ব নিয়ে স্বাধীনভাবে কোনো কিছু শুরু করাই হলো উদ্যোগ। আর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হলে তাকে ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ বলা হয়।
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১০ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-১. ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ঝুঁকি নিয়ে কোনো ব্যবসায় বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্দেশ্যে সম্পাদিত কালই ব্যবসায় উদ্যোগ। ব্যবসায় উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন। এটি সাধারণত নতুন ব্যবসায় শুরুর সাথে সম্পর্কিত। তবে প্রতিষ্ঠানে নতুন পণ্য বা সেবা চালু করাও ব্যবসায় উদ্যোগের মধ্যে পড়ে।
প্রশ্ন-২, ব্যবসায় উদ্যোগ প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা নিয়ে কোনো নতুন ব্যবসায় শুরুর চেষ্টাই হলো ব্যবসায় উদ্যোগ।
ব্যবসায় উদ্যোগের ফলে নতুন উপযোগ তৈরি হয়। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয়। উদ্যোক্তা ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। ফলে মানুষের আয়, ভোগ, সব্যয় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান প্রভৃতি বাড়ে। তাই ব্যবসায় উদ্যোগ প্রয়োজন।
প্রশ্ন-৩. উদ্যোক্তা বলতে কী বোঝা?
উত্তর: যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ নতুন চিন্তা মাথায় রেখে তা বাস্তবায়নে এগিয়ে যান, তাকে বা তাদের উদ্যোক্তা বলে। উদ্যোজা সাধারণ ব্যবসায়ী নন, পেশাদার ব্যবস্থাপকও নন। বরং এসবের চেয়ে বেশি কিছু। তারা সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করে ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যেতে আনন্দ গান। তার চিন্তায় ও কাজে সাফল্য অর্জনের মানসিকতা থাকে। এমন উদ্যোক্তা শ্রেণি যেকোনো দেশের জন্যই নিঃসন্দেহে বড় সম্পদ।
প্রশ্ন-৪, শিল্প উদ্যোক্তা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যে ব্যক্তি লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেন, তিনিই শিল্প উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা হলেন একটি ব্যবসায়ের সৃজনশীল পরিবর্তনের রূপকার। শিল্প উদ্যোক্তারা নতুন পণ্য
ও ধারণা নিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এক্ষেত্রে তারা দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার সাথে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যান। আমেরিকার বোর্ড কোম্পানি-এর প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড, জাপানের ম্যাটসুসিটা কোম্পানি-এর প্রতিষ্ঠাতা কনোকে ম্যাটসুসিটা বিশ্ববিখ্যাত শিল্প উদ্যোক্তা।
প্রশ্ন-৫. উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা পরস্পর নির্ভরশীল- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ঝুঁকি আছে জেনেও লাভের আশায় ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই উদ্যোগ। আর যিনি এগিয়ে আসেন, তিনিই উদ্যোক্তা।
উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ এবং শিল্পোদ্যোক্তা শব্দ দুটি একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ও অবিচ্ছেদ্য। একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠনের ভাবনা থেকে শুরু করে এর বাস্তবায়ন এবং একে সাফল্যে পৌছে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব কাজ সম্পাদনের ওপরই নির্ভর করে উদ্যোগ সফলতা। সুতরাং, এরা পরস্পর সম্পর্কিত ও নির্ভরশীল।
প্রশ্ন-৬. উদ্যোক্তা ব্যবস্থাপক থেকে ভিন্নতর কেন?
উত্তর: যিনি ঝুঁকি নিয়ে নিজস্ব চেষ্টায় নতুন কিছু তৈরি করেন তিনিই উদ্যোক্তা।
একজন ব্যবস্থাপক প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপায়-উপকরণাদি কাজে লাগান। আর উদ্যোক্তা ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করে লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত থাকেন। তিনি সুযোগের সঠিক ব্যবহার করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে তাকে বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। তিনি তা মোকাবেলায় বিভিন্ন কলা-কৌশল ব্যবহার করেন। কিন্তু, ব্যবস্থাপক ঝুঁকি নিয়ে কোনো কাজ করেন না। তাই উদ্যোক্তা ব্যবস্থাপক থেকে ভিন্নতর।
প্রশ্ন-৭. উদ্যোক্তাকে উদ্ভাবক বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যিনি নতুন কিছু গবেষণা করে সৃষ্টি করেন, তাকে উদ্ভাবক বলে।
উদ্যোক্তা হলেন একজন উদ্ভাবক। তিনি উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে নতুন কিছু সংযোজন করেন। তার উদ্ভাবন হতে পারে নতুন পদ্ধতি, যা এখনো উদ্ভাবন হয়নি অথবা নতুন পণ্য যা ভোক্তা এখনো পায়নি। এটি কাঁচামালের নতুন উৎস ও নতুন পণ্যের বাজারও হতে পারে। অর্থাৎ উদ্যোক্তা তার কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে নতুন কিছু উদ্ভাবন করায় তাকে উদ্ভাবক বলা হয়।
প্রশ্ন-৮. উদ্যোস্তাকে কেন জন্মগত উদ্যোক্তা বলা হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উদ্যোক্তা হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ঝুঁকি নেন। একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করার সময় বেশকিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিক গুণাবলি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তেমনি ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তার মাঝেও উদ্যোক্তা হওয়ার কিছু গুণাবলি জন্মসূত্রেই থাকে। এগুলো তিনি পরবর্তীতে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে ব্যবসায় বা অন্যান্য ক্ষেত্রে সফলতা পান। এক্ষেত্রে উদ্যোত্তার ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা তার মধ্যে অল্প বয়স থেকেই লক্ষ করা যায়। তাই বলা হয়, একজন উদ্যোক্তা জন্মগতভাবেই উদ্যোক্তা।
প্রশ্ন-১. উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি নিতে হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ঝুঁকি হলো আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা। যেকোনো সময়ে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। ঝুঁকি বা ক্ষতির আশঙ্কা আছে জেনেও উদ্যোক্তাকে মূলধন বিনিয়োগ এবং লাভের আশায় ব্যবসায় পরিচালনা করতে হয়। ঝুঁকি ছাড়া ব্যবসায় করা সম্ভব নয়। তাই উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি নিতে হয়। এজন্যই উদ্যোক্তার ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হয়।
প্রশ্ন-১০, ‘ভবিষ্যৎ দূরদর্শিতা ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করে’-ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে তা আগেই অনুমান করতে পারার সামর্থ্য হলো দূরদর্শিতা।
এটি একটি উদ্যোক্তাসুলভ গুণ। এর মাধ্যমে ব্যক্তি ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত যেকোনো বিষয় অনুমান করতে পারেন। এ ধরনের গুণসম্পন্ন ব্যক্তি অন্যদের চেয়ে আলাদাভাবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে থাকেন। এতে তিনি অব্যবহৃত সুযোগ-সুবিধা খুঁজে বের করে তা কাজে লাগান। ফলে ব্যবসায় সম্পর্কিত নিত্য-নতুন ধারণা পাওয়া তার পক্ষে সহজ হয়। এভাবে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দূরদর্শী ব্যক্তি দ্রুত স্বাবলম্বী হতে পারে।
প্রশ্ন-১১. ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা উদ্যোক্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে যে ব্যক্তি ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করেন তাকে উদ্যোক্তা বলে। ব্যবসায় ও ঝুঁকি পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঝুঁকি ছাড়া ব্যবসায় চিন্তাও করা যায় না। তাই উদ্যোক্তাকে সফল হতে হলে ঝুঁকি নিতে হয়। এছাড়া, একজন উদ্যোক্তাকে সবসময় অনিশ্চয়তার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেক্ষেত্রে পরিমিত পরিমাণ ঝুঁকি না নিলে ব্যবসায় পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। তাই, লক্ষ্য অর্জনে উদ্যোক্তার ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন-১২, উদ্যোক্তার সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী গুণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো।
অথবা, সৃজনশীল মানসিকতা কী? বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: মেধা ও মন দিয়ে নতুন কোনো কিছু তৈরি করা বা ধারণা সৃষ্টি করাকে সৃজনশীলতা বলে।
উদ্যোক্তা হলেন একজন উদ্ভাবক। তিনি উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে নতুন কিছু সংযোজন করেন। তার উদ্ভাবন হতে পারে নতুন পদ্ধতি, যা এখনো উদ্ভাবন হ্যানি। অথবা, নতুন পণ্য ভোক্তা এখনো পায়নি। এটি কাঁচামালের নতুন উৎস ও নতুন পণ্যের বাজারও হতে পারে। এসব কাজ উদ্যোক্তার সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী গুণের সমন্বয়েই সম্ভব হয়।
প্রশ্ন-১৩, উদ্যোক্তা কীভাবে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল করেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনের উপকরণসমূহকে একত্র করে নিজে কাজের মাধ্যমে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত ব্যক্তিকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলা হয়।
উদ্যোক্তারা তাদের সৃজনশীলতা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে নতুন চাহিদাসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে থাকেন। এ পণ্যের উৎপাদনের জন্য তারা নতুন কল-কারখানা গড়ে তোলেন। এক্ষেত্রে নতুন শিল্প স্থাপনের ফলে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। এসব বিষয় দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করে।
আরও দেখুন: ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।