ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১১ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১১ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ছাড়া পণ্যদ্রব্য বা মজুদ পণ্য সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। একটি প্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ মজুদ পণ্য আছে, কী পরিমাণ পণ্য বিক্রি হচ্ছে বা কী ধরনের পণ্য কী পরিমাণ আছে; তা সহজেই ‘আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে জানা যায়।
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১১ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-১ . তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কম্পিউটারাইজড ব্যবস্থায় একাধিক ব্যক্তির মধ্যে তথ্য দেওয়া-নেওয়াকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে।
এর মাধ্যমে একে অন্যের কাছে যেকোনো স্থান থেকে সহজে এবং দ্রুত তথ্য পাঠাতে পারে। ফলে মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকেও একে অপরের খোঁজ-খবর রাখতে পারছে। আবার, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ উন্নত পণ্য বা সেবা পাচ্ছে। এভাবেই তথ্যপ্রযুক্তি জীবনযাত্রাকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে দিয়েছে।
প্রশ্ন-২. ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ পদ্ধতির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
অথবা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কেন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কম্পিউটারাইজড ব্যবস্থায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে তথ্য দেওয়া-নেওয়াকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য দ্রুত বিনিময় করা হয়। এর মাধ্যমে কাজের গতি এবং কর্মীর দক্ষতা বাড়ে। এতে তথ্য হালনাগাদ করে সবসময় কেনা-বেচা সম্ভব হয়। এভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবসায়ের সাফল্য লাভে সহায়তা করে।
প্রশ্ন-৩, বর্তমান সময়কে তথ্যপ্রযুক্তির যুগ বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়াই হলো তথ্যপ্রযুক্তি। এ প্রযুক্তিতে ডেটাবেজ তৈরি করা হয়। আবার, সফটওয়্যার কেন্দ্রিক ইনপুট ও আউটপুট ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্যের উপস্থাপন করা হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। এর সাথে যোগাযোগ প্রযুক্তির সমন্বয়ে দ্রুত তথ্য দেওয়া-নেওয়া করা যায়। ফলে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় তথ্য সংগ্রহ করা যায়। তথ্যের এই সহল দেওয়া-নেওয়াতে সময় ও খরচ কম হওয়ায় বর্তমান সময়কে তথ্যপ্রযুক্তির যুগ বলা হয়।
প্রশ্ন-৪. ব্যবসায়ের আধুনিকায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন প্রভৃতির পাশাপাশি ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাহায্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে।
ব্যবসায়ের সব ক্ষেত্রেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দ্রুত প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রাহকদের কাছে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। এতে যোগাযোগ ব্যয় কমছে। এছাড়া, কাজের গতি ও দক্ষতা বাড়ছে। বর্তমানে ব্যবসায়ের । নিত্যনৈমিত্তিক আধুনিকায়নে এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখছে
প্রশ্ন-৫. অনলাইন ব্যবসায়ের ধারণা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক উপায়ে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ব্যবসায়িক কাজ করার প্রক্রিয়াকে অনলাইন ব্যবসায় বলে।
একজন ক্রেতা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে অর্ডার দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি অর্ডার অনুযায়ী সেটি গ্রাহকের কাছে পৌছে দেয়। অর্থাৎ, অনলাইনেই ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের সহায়তায় টাকা নেয়। এভাবেই অনলাইন ব্যবসায়ে ক্রেতারা সেবা পান।
প্রশ্ন-৬. ই-কমার্স কেন একটি আধুনিক ব্যবসায় পদ্ধতি? ব্যাখ্যা করো।
অথবা, ই-কমার্স বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো
উত্তর: পণ্য বণ্টন ও কেনা-বেচার কাজে আইসিটি-নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ই-কমার্স বলে।
এ পদ্ধতিতে কোনো নিদিষ্ট অফিসের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা যায়। এছাড়া, তাদের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে জেনে তা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। তাই, ই-কমার্স একটি আধুনিক ব্যবসায় পদ্ধতি।
প্রশ্ন-৭, ই-কমার্স কীভাবে ই-বিজনেস থেকে আলাদা?
উত্তর: ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা লেনদেন করাকে ই-কমার্স বলে। আর, ইন্টারনেটের সাহায্যে পণ্য ও সেবা উৎপাদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে পৌছানো পর্যন্ত যাবতীয় কাজের সমষ্টিকে ই-বিজনেস বলে। ই-কমার্স মূলত ই-বিজনেসের একটি শাখা বা অংশ। ই-কমার্স পণ্য ও সেবা কেনা-বেচার মধ্যে সীমাবন্ধ। কিন্তু ই-বিজনেস পণ্য ও সেবা কেনা-বেচাসহ ব্যবসায়ের সব কাজের সাথে জড়িত। ই-কমার্স একটি বাহ্যিক প্রক্রিয়া হলেও ই-বিজনেস অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া। তাই ই-কমার্সে ক্রেতা, বিক্রেতা, সরবরাহকারী প্রভৃতি পক্ষ বাড়িত থাকে। আর ই-বিজনেসে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, মজুদ ব্যবস্থাপনা, পণ্য উন্নয়ন প্রভৃতি কাজ বেশি করতে হয়। এভাবে ই-কমার্স, ই-বিজনেস থেকে আলাদা।
প্রশ্ন-৮. এম-কমার্স কোন ধরনের ব্যবসায় ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এম-কমার্স এক ধরনের ই-কমার্স, যেটি অনলাইন ব্যবসায়ের অন্তর্গত। এর অর্থ হলো মোবাইল কমার্স বা মোবাইলভিত্তিক বাণিজ্য ব্যবস্থা। মোবাইল ব্যবহার করে যখন ই-কমার্স করা হয়, তখন সেটি হয় এম-কমার্স। এটি ব্যবহার করে ২৪/৭ ঘণ্টাব্যাপী অনলাইনে ব্যবসায়িক সেবা দেওয়া হয়।
প্রশ্ন-৯. বিটুবি (B2B) পদ্ধতিতে কীভাবে ব্যবসায় করা হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ই-কমার্সের বা ই-বিজনেসের B2B মডেল বলতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর মধ্যে পারম্পরিক সম্পর্ক ও কেনা-বেচা করাকে বোঝায়। এটি বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যবসায় করে থাকে, যার মধ্যে বিটুবি উল্লেখযোগ্য। বিটুবি মডেল বলতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও কেনা-বেচা করাকে বোঝায়। এতে ব্যবসায়ে খরচের পরিমাণও কমে যায়। এছাড়া, মধ্যস্থতাকারী ব্যবসায়ীর প্রয়োজন হয় না। ফলে কম মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন-১০. B2C কোন ধরনের ই-বিজনেস?
উত্তর: B2C হলো ই-রিটেইলিং। এর পূর্ণরূপ হলো-Business to Consumer (ব্যবসায় থেকে ভোক্তা)। এটি ই-রিটেইলিং বা খুচরা ব্যবসায়ের মতো, যেখানে ব্যবসায়ীরা সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে ক্রেতা ইন্টারনেট ব্যবহার করে দোকানের ওয়েবসাইটে পণ্য ও মূল্য দেখে ফরমায়েশ দেয়। আর ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মূল্য পরিশোধ করে। এরপর নির্দিষ্ট ঠিকানা অনুযায়ী ব্যবসায়ী সরাসরি ক্রেতার কাছে পণ্য সরবরাহ করে। যেমন: amazon.com। ক্রেতার সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক তৈরিতে B2C মডেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন-১১. ই-মার্কেটিং বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মার্কেটিং কাজ পরিচালনাই হলো ই-মার্কেটিং। ক্রয়-বিক্রয়, নতুন বাজার সৃষ্টি, ভোক্তাদের আকৃষ্ট করা প্রভৃতি মার্কেটিংয়ের কাজ। ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে এ কাজগুলো করা হলে, তা হয় ই-মার্কেটিং। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট, ই-মেইল, মোবাইল ফোন, ডেবিট, কার্ড, ক্রেডিট কার্ড এ ধরনের ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন-১২. ই-মার্কেটিং-এর কাজ সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: ইন্টারনেট-নির্ভর প্রযুক্তির মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বাজারজাতকরণ এবং ক্রেতার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলাই হচ্ছে ই-মার্কেটিং। এটি অনলাইন ব্যবসায়ের একটি শাখা। এটি নতুন বাজার সৃষ্টি করে পণ্যের চাহিদা বাড়ায়। এছাড়া, পণ্যের ব্যান্ড ভ্যালুও সৃষ্টি করে। এটি বর্তমানে বেশি জনপ্রিয়।
প্রশ্ন-১৩. পরোক্ষ ই-মার্কেটিং বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট সরাসরি ব্যবহার না করে অন্যান্য ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে মার্কেটিং কাজ পরিচালনা করা হয়, তাকে পরোক্ষ ই-মার্কেটিং বলে।
পরোক্ষ ই-মার্কেটিং পদ্ধতিতে ই-মেইল, ব্লগ, ফেসবুক প্রভৃতি মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে ক্রেতার সাথে প্রতিষ্ঠানের পরোক্ষ যোগাযোগ তৈরি করা হয়। ব্যবসায়ের এ পদ্ধতিতে ব্যবসায়িক খরচ অনেক কমে যায়। কিন্তু ক্রেতাকে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয় না।
প্রশ্ন-১৪, ই-ব্যাংকিং বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আধুনিক ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাংকিং কাজ পরিচালনা করাকে ই-ব্যাংকিং বলে। ইন্টারনেটনির্ভর কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবসময় ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে কম সময় ও খরচে অর্থ জমা, উত্তোলন ও স্থানান্তর এবং লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। আবার, ই-ব্যাংকিং ATM কার্ডের গ্রাহকদের ২৪ ঘণ্টা লেনদেনের সুবিধাও দিয়ে থাকে।
প্রশ্ন-১৫. এনি ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যে ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাংকের গ্রাহক ব্যাংকের একটি শাখায় হিসাব খুলে দেশের অন্য যেকোনো শাখায় তার লেনদেন করতে পারেন, তাকে এনি ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং বলে। এক্ষেত্রে গ্রাহক দেশের যেকোনো শাখা থেকে আর্থিক লেনদেন করতে পারেন। এতে গ্রাহককে দ্রুত ব্যাংকিং সেবা দেওয়া যায়। এছাড়া কম সময়ে ও খরচে লেনদেন সম্পন্ন হওয়ায় জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে হয়।
প্রশ্ন-১৬, প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাংকিং কাজকে সহজ করেছে। ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যে ব্যাংকিং কাজ করা হয়, তা-ই হলো ই-ব্যাংকিং। আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাহায্যে ব্যাংক দূরে অবস্থিত গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। আবার, এর মাধ্যমে ব্যাংক ২৪ ঘণ্টা টাকা উত্তোলনের সুবিধা দেয়। অর্থাৎ, বর্তমান ব্যাংকিং কাজ আরও সহজ হয়ে গেছে তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই।
প্রশ্ন-১৭. ডেবিট কার্ড বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ডেবিট কার্ড একটি ই-ব্যাংকিং পণ্য। এটি হলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গ্রাহককে ইস্যু করা এক ধরনের প্লাস্টিক চৌম্বক ইলেকট্রনিক কার্ড। এ কার্ড নগদ অর্থ ও চেকের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে গ্রাহক পাসওয়ার্ড বা গোপন নম্বর ব্যবহার করে। নির্দিষ্ট এটিএম বুথ থেকে যেকোনো সময়ই তার জমাকৃত টাকা উত্তোলন, স্থানান্তর, নগদ লেনদেন প্রভৃতি কাজ করেন। এতে ডেবিট কার্ড নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি কমায়।
আরও দেখুন: ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ৯ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।