ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ৫ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ৫ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানির সদস্য হওয়ার জন্য অবশ্যই এর শেয়ার কিনতে হবে। শেয়ার না কিনে কেউ এর সদস্য হতে পারে না। দেশের নাগরিকদের মধ্যে সাবালক ও যোগ্য যেকোনো ব্যক্তি শেয়ার কিনে এর সদস্যপদ অর্জন করতে পারে। এছাড়া স্মারকলিপি দ্বারা অনুমোদিত হলে অন্য কোনো কোম্পানিও এর সদস্যপদ লাভ করতে পারে।
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ৫ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-১. ব্যবসায়ের আইনগত সত্তা কেন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা করো।
অথবা, ব্যবসায়ের স্বাধীন সত্তা বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ব্যবসায়ের আইনগত বা স্বাধীন সত্য বলতে আইনের মাধ্যমে গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হওয়াকে বোঝায়; যার মাধ্যমে কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার মর্যাদা লাভ করা যায়।
আইনগত সত্তা অর্জনের মাধ্যমে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নিজ নামে সব জায়গায় পরিচিতি লাভ করে। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে নিজ নামে লেনদেন করা যায়। এছাড়া, তৃতীয় পক্ষের সাথে যেকোনো আইনগত চুক্তি সম্পাদন ও অধিকার লাভ করা যায়।
প্রশ্ন-২, কোম্পানির চিরন্তন অস্তিত্ব বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো
উত্তর: কোম্পানির চিরন্তন অস্তিত্ব বলতে বিলোপ হয় না এমন অস্তিত্বকে বোঝায়। কোম্পানি সংগঠন অন্যান্য সংগঠনের মতো সহজে বিলোপ হয় না। তাই এটি আইন অনুযায়ী চিরন্তন অস্তিত্বের মর্যাদা পায়। পৃথক ও স্বাধীন সত্তার কারণে শেয়ারহোল্ডারদের মৃত্যু, দেউলিয়াত্ব প্রভৃতি এ ব্যবসায়ের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে না। শুধু আইনের মাধ্যমেই এ ব্যবসায়ের বিলোপসাধন সম্ভব।
প্রশ্ন-৩. কোম্পানি সংগঠনকে কেন চিরন্তন অস্তিত্বর অধিকারী বলা হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: চিরন্তন অস্তিত্ব বলতে কখনো বিলুপ্ত হয় না এমন অস্তিত্বকে বোঝায়। কোম্পানি সংগঠন, অন্যান্য ব্যবসায়ের মতো সহজে বিলুপ্ত হয় না। আইন অনুযায়ী এ ব্যবসায় চিরন্তন অস্তিত্বের মর্যাদা ভোগ করে। পৃথক ও স্বাধীন সত্তার কারণে শেয়ারহোল্ডারদের মৃত্যু, দেউলিয়াত্ব, শেয়ার হস্তান্তর প্রভৃতি এ ব্যবসায়ের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে না। আইনগত আনুষ্ঠানিকভার মাধ্যমেই এ ব্যবসায়ের বিলোপ হয়। তাই কোম্পানি হলো চিরন্তন অস্তিত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন-৪. কোম্পানির কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।
অথবা, কোম্পানি সংগঠনের ‘কৃত্তিম সত্তা’ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যে সত্তা বা অস্তিত্বের মাধ্যমে কোম্পানি নিজ নামে গঠিত ও পরিচালিত হয়, তাকে কোম্পানির কৃত্রিম সভা বলে। কোম্পানিকে তার মালিক বা শেয়ারহোল্ডারদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা সত্তা হিসেবে দেখা হয়। এ সংগঠন ব্যক্তি না হয়েও নিজ নামে চুক্তি করা, লেনদেন ও প্রয়োজনে মামলা করতে পারে। কোম্পানি নিজ নামেই পরিচিত ও পরিচালিত হয়। এছাড়া, এটি নিজস্ব সিলমোহর ব্যবহার করে।
প্রশ্ন-৫. কোম্পানিকে ‘আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান’ বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান বলতে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করে প্রতিষ্ঠান গঠন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করাকে বোঝায়।
কোম্পানিকে ‘আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান’ বলার কারণ, এটি দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইনের আওতায় অথবা সরকারের বিশেষ অধ্যাদেশে গঠিত হয়। ফলে এ ধরনের ব্যবসায়ের গঠন পদ্ধতি বেশ আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ ও জটিল। তাই, কোম্পানি একটি আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন-৬. কোম্পানি সংগঠন কীভাবে মূলধন গঠনে ভূমিকা রাখে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কোম্পানি সংগঠন হলো আইনের মাধ্যমে গঠিত চিরন্তন অস্তিত্বসম্পন্ন, কৃত্রিম ব্যক্তিসতার অধিকারী এবং সীমিত দায়ের এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান; যেখানে কয়েকজন ব্যক্তি যৌথভাবে মূলধন বিনিয়োগ করে।
শেয়ার কেনার মাধ্যমে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়। তাই এটি একটি উত্তম বিনিয়োগ ক্ষেত্র। এক্ষেত্রে’ বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সদ্যয়ের প্রবণতা দেখা যায়। এ সঞ্চয় থেকে শেয়ার কেনার মাধ্যমে তা বিনিয়োজিত মূলধনে পরিণত হয়। এভাবেই কোম্পানি সংগঠন মূলধন গঠনে ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন-৭ . নিজস্ব সিলমোহর কেন ব্যবহার করা হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কোম্পানির প্রতিনিধির বৈধতা কোম্পানির সাধারণ সিলমোহরের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার এটি নিজস্ব সিলমোহরের ব্যবহার করে। কোম্পানি কৃত্রিম ব্যক্তি হওয়ার কারণে সব কাজেই তাকে প্রতিনিধির ওপর নির্ভর করতে হয়। এ প্রতিনিধির বৈধতা কোম্পানির সাধারণ সিলমোহরের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকে। কোম্পানির সব কাগজপত্রে এ সিলের ব্যবহার আবশ্যক। কারণ এর নিজস্ব সিল ছাড়া আইনগতভাবে কাগজপত্র বৈধ হয় না। তাই কোম্পানির সব কাগজে এর নিজস্ব সিলমোহর ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন-৮, লিমিটেড কথাটি লেখার কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: লিমিটেড কথাটির অর্থ সীমাবন্ধ বা শেয়ার দিয়ে সীমাবদ্ধ।
সাধারণত যৌথ মূলধনী কোম্পানিতে মালিকদের দায় শেয়ার মূল্য দিয়ে সীমাবদ্ধ। এতে কোনো শেয়ারহোল্ডারকেই তার নির্দিষ্ট দায়ের বেশি দায় নিতে হয় না। অর্থাৎ কোম্পানির দায় যেমন যোক না কেন, দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রে তা সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার মূল্যের বেশি হতে পারে না। তাই লিমিটেড কথাটি দায়ের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করার পাশাপাশি যৌথ মূলধনী কোম্পানির পরিচয়ও বহন করে।
প্রশ্ন-৯. কোম্পানি সংগঠন অনেকের কাছে পছন্দের কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কোম্পানি সংগঠনের অস্তিত্বের কারণে অনেকের কাছে এটি পছন্দের।
এটি একটি আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। আইনের মাধ্যমে কোম্পানি গঠিত ও পরিচালিত হয়। তাই এটি পৃথক সভা বিশিষ্ট চিরন্তন অস্তিত্বের অধিকারী। কোম্পানির সকল শেয়ারহোল্ডার মারা গেলেও এর অস্তিত্বের কোনো সমস্যা হয় না। এজন্য বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে পাওনাদার, ব্যাংকার, সরবরাহকারীসহ সকলের কাছে কোম্পানি সংগঠন পছন্দনীয়।
প্রশ্ন-১০. বিধিবদ্ধ সংস্থা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: রাষ্ট্রপ্রধানের বিশেষ অধ্যাদেশে গঠিত, নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত কোম্পানিকে বিধিবদ্ধ সংস্থা বলে।
এসব প্রতিষ্ঠান দেশের জনগণের কল্যাণে কোনো বিশেষ কাজ করার জন্য গঠিত হয়। যেমন: বিআরটিসি, ওয়াসা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সরকার এ সংস্থাগুলোর শেয়ার মালিক হয়ে কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। বিধিবদ্ধ সংস্থা সরকারিভাবে হলেও এটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এর উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি নির্দিষ্ট আইন-কানুন দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
প্রশ্ন-১১. ‘বিধিবদ্ধ কোম্পানির উদ্দেশ্য জনকল্যাণকর’-ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: দেশের আইনসভায় বিল পাস বা রাষ্ট্রপতির বিশেষ অধ্যাদেশে গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিকে বিধিবদ্ধ কোম্পানি বলে।
এ কোম্পানির উদ্দেশ্য জনকল্যাণকর। এ ধরনের কোম্পানির মাধ্যমে দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও জনকল্যাণমূলক কাজ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক, ওয়াসা, বাংলাদেশ বিমান প্রভৃতি বিধিবদ্ধ কোম্পানির উদাহরণ।
প্রশ্ন-১২. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলতে কী বোঝ?
উত্তর: ন্যূনতম দুই জন এবং সর্বোচ্চ প্যাশ জন সদস্যের সমন্বয়ে সীমাবদ্ধ দায়ের ভিত্তিতে গঠিত সংগঠন হলো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।
এ ধরনের কোম্পানি নিবন্ধনপত্র পাওয়ার পরই কাজ শুরু করতে পারে। সাধারণত বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে এটি গঠিত হয়। এ কোম্পানি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে শেয়ার কেনার আমন্ত্রণ জানাতে পারে না। এছাড়া প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযোগ্য নয়।
প্রশ্ন-১৩. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার বিক্রির নিয়মটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পাবলিক লি. কোম্পানি শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত হয়ে শেয়ার বিক্রি করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি আইনের অধীনে নিবন্ধিত হতে হয়। নিবন্ধনের পর মূলধন সংগ্রহের জন্য এটিকে বিবরণপত্র প্রচার করতে হয়। এক্ষেত্রে কোম্পানি শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত হয়ে বিবরণপত্র প্রচার করে। এ বিবরণপত্রে শেয়ারের ব্যাখ্যা ও মূল্য উল্লেখ করতে হয়। এভাবে পাবলিক লি, কোম্পানি শেয়ার বিক্রি করে থাকে।
প্রশ্ন-১৪. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির তুলনায় ক্ষুদ্রায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি দুটিই যৌথ মূলধনী সংগঠন।
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি সাধারণত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির চেয়ে ছোট আয়তনের হয়। কারণ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সদস্য সংখ্যা ২-৫০ জন। এর সদস্যরাই মূলধনের ব্যবস্থা করে। অন্যদিকে, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সদস্য শেয়ার সংখ্যায় সীমাবদ্ধ। শেয়ারের পরিমাণ বেশি হলে সদস্য সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এ ধরনের কোম্পানি জনগণের কাছে শেয়ার বিক্রি করে অনেক বেশি মূলধনের ব্যবস্থা করতে পারে। তাই এর আয়তনও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির চেয়ে বড় হয়।
প্রশ্ন-১৫. হোল্ডিং কোম্পানি বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যদি কোনো কোম্পানি অন্য কোনো কোম্পানির ৫০%-এর বেশি শেয়ারের মালিক হয় বা মোট ভোট দেওয়ার ক্ষমতার ৫০%-এর অতিরিক্ত ক্ষমতা পায়, তাকে হোল্ডিং কোম্পানি বলে।
এ কোম্পানি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অধিকাংশ পরিচালক নিয়োগ করার ক্ষমতার অধিকারী হয়। বাংলাদেশে স্কয়ার গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ প্রভৃতির ক্ষেত্রে মূল কোম্পানি এ ধরনের কোম্পানি হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন-১৬. যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের গঠনতন্ত্র বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের গঠনতন্ত্র বলতে স্মারকলিপিকে বোঝায়। এ দলিলে যৌথ মূলধনী কোম্পানির মৌলিক বিষয়গুলো (নাম, ঠিকানা, উদ্দেশ্য, দায়, মূলধন ও সম্মতি) সংক্ষেপে লিপিবন্ধ থাকে।
এটি কোম্পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল। কারণ স্মারকলিপি ছাড়া কোম্পানি গঠিত হতে পারে না। এর আওতার বাইরে কোম্পানি কোনো কাজও করতে পারে না। তাই স্মারকলিপিকে কোম্পানির গঠনতন্ত্র বলে।
প্রশ্ন-১৭. স্মারকলিপিকে কোম্পানির মূল সনদ বলার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যে দলিলে কোম্পানির মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ থাকে, তাকে স্মারকলিপি বলে।
এটি কোম্পানির মূল দলিল। এতে কোম্পানির নাম, ঠিকানা, উদ্দেশ্য, মূলধন, দায় ও সম্মতির বিষয় দেওয়া থাকে। এছাড়া, এটি কোম্পানির কাজের ক্ষেত্র ও ক্ষমতার সীমা নির্দেশ করে। এতে অন্তর্ভুক্ত নেই এমন কোনো কাজ কোম্পানি করলে, তা ক্ষমতার বাইরের কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই একে কোম্পানির মূল সনদ বলা হয়।
আরও দেখুন: ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।