ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: সমবায়ের শাব্দিক অর্থ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও উদ্যোগে কাজ করা। মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়েই অন্যের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এ কারণেই ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’, ‘একতাই বল’, ‘প্রতিযোগিতা নয় সম্প্রীতি’ প্রভৃতি নীতির ওপর ভিত্তি করে সমবায় সমিতির উৎপত্তি। সমবায়ের মাধ্যমে কিছু ব্যক্তি পরস্পরের সহযোগিতায় নিজেদের আর্থিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান করে। এভাবে তারা সুন্দর ও সচ্ছল জীবনযাপন করতে পারে।


ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-১. সমবায় গঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সদস্যদের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নই সমবায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য।

এ সমিতি প্রতিষ্ঠার মূল কারণ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের আর্থিক কল্যাণ করা। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের লোকজন মধ্যস্বব্যবসায়ীর শোষণ থেকে নিজেদের রক্ষা করে আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ন করে। অর্থাৎ, সমবায় গঠনের ফলে সদস্যদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। এ উদ্দেশ্যই সদস্যরা সমবায় গঠন করেন।

প্রশ্ন-২, সমবায়কে স্বল্প আয়ের মানুষের সংগঠন বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পারস্পরিক অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে সমশ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিরা সমান অধিকারের ভিত্তিতে আইনের আওতায় যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, তাকে সমবায় সমিতি বলে।

সমাজের কম আয়ের সমশ্রেণি বা পেশার মানুষ নিজেদের আর্থিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে সমান অধিকারের ভিত্তিতে সমবায় সংগঠন গড়ে তোলেন। এ সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো তাদের সীমিত সামর্থ্যকে একত্র করে নিজেদের আর্থ-সামালিক কল্যাণ করা। সীমিত সামর্থ্য বা স্বল্প আয়ের লোকদের সমন্বয়ে এ সংগঠন গড়ে তোলা হয় বলে এটিকে স্বল্প আয়ের মানুষের সংগঠন বলা হয়।

প্রশ্ন-৩, ‘সমবায় একটি স্বেচ্ছামূলক সংগঠন’ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সমবায় হলো সমান শ্রেণির কয়েকজন ব্যক্তির স্বেচ্ছামূলক সংগঠন, যেখানে সদস্য হওয়ার জন্য কাউকে বাধ্য করা হয় না। সাধারণত একই এলাকার সমান শ্রেণির লোকজন স্বেচ্ছায় একত্রিত হয়ে এ ধরনের সংগঠন গড়ে তোলেন। এতে তারা নিজেরাই মূলধন সরবরাহ করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত থাকেন। তাই, সমবায় হলো একটি স্বেচ্ছামূলক সংগঠন।

প্রশ্ন-৪, সমবায় সমিতিকে কেন গণতান্ত্রিক সংগঠন বলা হয়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যে সংগঠনে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সকল সদস্যের সাথে আলাপ-আলোচনা করা হয় ও মতামতের মূল্যায়ন করা হয়, তাকে গণতান্ত্রিক সংগঠন বলে।

এ সমিতির ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের নীতিতে সদস্যদের অটল থাকতে হয়। এক্ষেত্রে সদস্যরা সব কাজে সকলের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। এছাড়া সমিতি পরিচালনার ক্ষেত্রে সকলের অধিকার সমান থাকে। এখানে স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ থাকে না। গণতান্ত্রিকভাবেই সমিতির সব সিন্যান্ত নেওয়া হয়। এতে প্রত্যেকে পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ ও অধিকার পান। আবার, শেয়ার সংখ্যা একের বেশি হলেও গণতন্ত্রের আলোকে প্রত্যেকে একটি মাত্র ভোট দেওয়ার অধিকারী হন। তাই সমবায় সমিতিকে গণতান্ত্রিক সংগঠন বলা হয়।

প্রশ্ন-৫. ‘নিছক মুনাফা অর্জন নয়, সদস্যদের আর্থ-সামাজিক কল্যাণসাধনই সমবায়ের মূল লক্ষ্য’- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সমবায় একটি ভিন্নধর্মী প্রতিষ্ঠান, যেটি সমাজের নিম্ন আয়ের বা শ্রমজীবীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংগঠিত হয়।

এ সংগঠন সমাজের বিত্তহীন বা স্বপ্নবিত্তসম্পন্ন মানুষের প্রচেষ্টায় গঠিত হয়। ফলে এর মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। তাই সমবায় সংগঠন শুধু মুনাফা অর্জন করেনা। এছাড়া, সদস্যদের পারস্পরিক অর্থনৈতিক কল্যাণও করে। মূলত তাদের আশাবাদী, কর্মমুখী, দক্ষ ও নৈতিকতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলাই এর মূল লক্ষ্য।

প্রশ্ন-৬, সমবায়ের শেয়ার ক্রয় সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পারস্পরিক অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে সমশ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন হলো সমবায় সমিতি।

এ সংগঠনের উপবিধিতে প্রত্যেক সদস্যের শেয়ার কেনার সর্বোচ্চ সীমা উল্লেখ করা থাকে। সমবায় আইন অনুযায়ী একজন সদস্য মোট শেয়ার মূলধনের ২০% বা এর বেশি শেয়ার কিনতে পারে না। এতে যে কেউ বেশি সংখ্যক শেয়ার কিনে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। সমবায় সমিতির সাম্য নীতির আলোকে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এতে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সদস্য সমান অধিকার পায়।

প্রশ্ন-৭. সমবায়ের সদস্যদের অবাধে শেয়ার কেনার সুযোগ দেওয়া হয় না কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সমবায় আইন অনুযায়ী একজন সদস্য শেয়ার মূলধনের ২০% বা ১/৫-এর বেশি শেয়ার কিনতে পারে না।

নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ারের কারণ হলো কেউ বেশি শেয়ার কিনে যেন সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব না পেতে পারে। সমিতির সদস্যরা আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে যে অবস্থানের হোক না কেন, সবার অধিকার বজায় থাকে তা লক্ষ রাখা হয়। কারণ, বেশি আয়ের সদস্যরা বেশি শেয়ার কিনে সমিতি পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। এতে অন্যদের স্বার্থ নষ্ট হতে পারে। তাই সদস্যদের অবাধে শেয়ার কেনার সুযোগ থাকে না।

প্রশ্ন-৮, সমবায় সমিতিতে কীভাবে মুনাফা বণ্টন করা হয়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পারস্পরিক অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে সমশ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিরা সমান অধিকারের ভিত্তিতে মিলিত হয়ে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, তাকে সমবায় সমিতি বলে।

সমবায়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সদস্যদের কল্যাণ করে ব্যবসায় পরিচালনা করা। এক্ষেত্রে মুনাফা অর্জন সমিতির মূল উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু সমিতি তার কাজের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে থাকে। এক্ষেত্রে সমিতির অর্জিত মোট মুনাফা থেকে বাধ্যতামূলকভাবে কমপক্ষে ১৫% সদ্যিতি তহবিলে ও ৩% সমবায় উন্নয়ন তহবিলে জমা রেখে বাকি অংশ শেয়ার অনুপাতে সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। তবে এর পরিমাণ পরিশোধিত মূলধনের ৭৫% এর বেশি হওয়া যাবে না।

প্রশ্ন-৯. সমবায় সদস্যদের সীমাবন্য দায় বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সীমাবদ্ধ দায় বলতে সদস্যদের বিনিয়োগকৃত মূলধন পর্যন্ত দায় নেওয়াকে বোঝায়।

সাধারণত সমবায় সমিতির সদস্যদের দায় সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ, দায় তার কেনা শেয়ারমূল্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এর অতিরিক্ত দায় বহন করতে সদস্যরা বাধ্য থাকে না। এটি সমবায় সদস্যদের সীমাবদ্ধ দায়।

প্রশ্ন-১০, কেন সমবায় মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যে নির্দিষ্ট আদর্শের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে চলে তাই নীতি।”

সমবায় সমিতির কতগুলো অবশ্যই পালনীয় ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা রয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে সমবায়ের কাজ সম্পাদন ও পারস্পরিক কল্যাণে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হয়। এসব নীতি অমান্য করলে সমবায়ের অস্তিত্বের অবসান হয়। তাই সমবায় সমিতি কিছু মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়।

প্রশ্ন-১১. সমবায়ের মূলমন্ত্র কোনটি এবং কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সমবায়ের মূলমন্ত্র হলো ‘একতাই বল’।

সকলে মিলে একভাবে, একমনে ও একত্রে চলার দৃঢ় অভিব্যক্তিই হলো একতা। ঐক্যবন্ধভাবে চলার ফলে একতা সৃষ্টি হয়। প্রত্যেক সমবায়ীকে বুঝতে হয়, ঐক্যই তাদের শক্তি। তাই এটি নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা থেকে সদস্যরা বিরত থাকেন। এজন্য একতাকে সমবায়ের মূলমন্ত্র বলা হয়।

প্রশ্ন-১২, ‘একতাই বল’ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
অথবা, ‘একতাই বল’- সমবায়ের এ মূলনীতি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ‘একতাই বল’-এ মৌলিক নীতির ওপর সমবায় প্রতিষ্ঠিত। যেটির মূল বিষয় হলো সদস্যদের মধ্যে একতা বজায় রাখা। দরিদ্র্য ও সমমনা ব্যক্তিরা নিজেদের সীমিত সামর্থ্যকে একত্র করে সমবায় গঠন করেন। তাই সফলতা লাভের সব অবস্থাতেই এর সদসাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়। সমবায় সমালের দুর্বল শ্রেণিকে ঐক্যবন্ধ করে পারস্পরিক সহযোগিতায় পথ চলার নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। এতে তাদের মধ্যে একতা তৈরি হয়ে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়। এটিই সমবায়ের ‘একতাই বল’ নীতির মূল কথা।

প্রশ্ন-১৩. সমবায়ে সাম্যতার নীতি বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সমবায়ের সকল সদস্যই সমান মর্যাদার অধিকারী, এটিই সমবায় সমিতির সাম্যের নীতি।

সমবায় সমিতি সাম্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত। এর সদস্যরা সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পারিবারিকভাবে ভিন্ন হলেও সকলেই এখানে সমান মর্যাদার অধিকারী। তাই সমবায়ে সদস্যরা একটির বেশি শেয়ারের মালিক হলেও সাম্যের নীতিতে সবাই একটি মাত্র ভোটের অধিকারী।


আরও দেখুন: ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর

আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *